
এম. মতিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ২ লাখ টাকার অনুদান দিবে সরকার। সেই অনুদানের টাকা পাওয়ার ইউএনও’র সাথে কথা বলতে একটি মোবাইল নাম্বার দেন ইউপি সদস্য। উক্ত নাম্বারে ইউএনও’র সাথে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন ইউপি সদস্যের স্ত্রী। কথা বলার পর ইউএনও’র দেয়া একটি নগদ নাম্বারে দুই দফায় ৪৩ হাজার টাকা পাঠান হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। পুরো বিষয়টি ছিল প্রতারণা।
এমনটাই ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা এক মুক্তিযুদ্ধার সাথে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে করে মুজিববর্ষের অনুদানের ২ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে আবদুল কাদের (৬৪) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু আবছার (৫২) বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় ইউপি সদস্য আবু আবছার (৫২) ও তার স্ত্রী সাজু আক্তারের (৪২) বিরুদ্ধে নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ও রাঙ্গুনিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার ওই মুক্তিযোদ্ধা।
এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে ওই ইউপি সদস্য ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবী করেন। বিষয়টি তদন্ত করছেন উপজেলা প্রশাসন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় (আনুমানিক) স্ত্রী সাজু আক্তারকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদেরের বাসায় পাঠান ইউপি সদস্য আবু আবছার। সাজু আক্তার বাসায় ঢুকে আব্দুল কাদেরকে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন আবছার মেম্বারের সাথে। এসময় আবছার মেম্বার তাকে মুঠোফোনে বলেন, সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ২ লাখ টাকার অনুদান দিচ্ছে। সেজন্য ইউএনও’র সাথে মোবাইলে (০১৮৯১-৬০১৬৭৮) একটি মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে কথা বলার নির্দেশনা দেন। তার কথা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের নিজের মুঠোফোন থেকে নাম্বারটিতে ফোন দেন। ফোনে ইউএনও পরিচয়দানকারী ব্যক্তি একটি (০১৮৭২-৪২১১২৭) নাম্বার দিয়ে বলেন, নাম্বারটি সোনালী ব্যাংকের ‘নগদ একাউন্ট’ নাম্বার। ২ লাখ টাকার অনুদান পেতে হলে সেই নাম্বারে এক ঘন্টার মধ্যে ৪৩ হাজান ৬৪০ টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেন ইউএনও পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি।
পরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের স্থানীয় বাজারে গিয়ে ইউএনও পরিচয়ধারী ব্যাক্তির দেয়া (০১৮৮৩৩৩৮৮৪) নগদ নাম্বারে দুই দফায় ৪৩ হাজার ৬৪০ টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পরের দিন মোবাইল নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়ায় বিষয়টি ইউপি সদস্য আবু আবছারকে জানালে তিনি উল্টো তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করেছে বিধায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের বলেন, ‘ইউএনও’র নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করে ইউপি সদস্য আবু আবছারই এই টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে। তিনি ইতিপূর্বেও এলাকার আরও অনেকের সাথে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছিল। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আবু আবছার বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বানোয়াট। ইউএনও পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি আমাকে মুঠোফোনে মুক্তিযোদ্ধাদের মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই ব্যাক্তি আমার এলাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধা আছে কিনা জানতে চাইলে আমি আমার প্রতিবেশী আবদুল কাদেরের কথা বলি। তার সাথে কথা বলতে চাইলে আমি এলাকার বাইরে থাকায় আমার স্ত্রীকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে নম্বারটি তাদের দিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম। পরবর্তীতে শুনি তারা ওই নাম্বারে কথা বলে অন্য একটি নম্বারে টাকা পাঠিয়েছে। আমি বিষয়টি শুনার সাথে সাথে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তার পক্ষ হয়ে নিজে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আমাকে ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মজিদ বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে দেখা গেছে ইউএনও পরিচয়দানকারী ফোন নাম্বারের মালিক শাহিন নামে এক ব্যক্তি, যার বাড়ি চাঁদপুর সদর থানার নারায়নপুর গ্রামে। যেই নাম্বারটিতে টাকা পাঠানো হয়েছে সেটি সেলিনা আক্তার নামে এক মহিলার। যার বাড়ি নোয়াখালী সদর থানার নোয়ান্নাই ইউনিয়নের আতুরীর বাড়ি এলাকায়। এই বিষয়ে দুই পক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে। এবিষয়ে আরো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফতেখার ইউনুস বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ঘটনা সঠিক হলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।’
রাঙ্গুনিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খাইরুল বশর মুন্সি বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে প্রতারণা করে এভাবে টাকা আত্মসাৎ করা চরম অন্যায়। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে এমন প্রতারণার দুঃসাহস করতে না পারে।’