মোঃ রুবেল খানঁ,মোংলা।।
দুবলার চরে আলোর কোলে শুঁটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছে সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলে। সোমবার ২৫ অক্টোবর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সমুদ্রগামী প্রায় পাঁচ শতাধিক নৌকা মোংলার মেরিন সড়কের নদীর পাশে অবস্থান নিয়ে পাশ পারমিটের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের এ যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী পথে কোস্টগার্ড-নৌ পুলিশ ও বনবিভাগের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দিনে মোংলার চিলা খাল ও পশুর নদীর পাড়ে অপেক্ষমান জেলেরা সোমবার ভোর থেকেই সমুদ্র যাত্রার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বনবিভাগ ও শুুঁটকী ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, মোংলা থেকে নদী পথে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোসাগরের দুবলার চরাঞ্চালের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকেই সাগর পাড়ে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এখানে জড়ো হয়ে থাকে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে। সাগরে মাছ শিকার আর শুটকী প্রক্রিয়াকরণের জন্য জেলেরা অস্থায়ী বসতি গাড়ে তোলে দুবলা, মেহের আলী, আলোর কোল নারকেলবাড়ীয়াসহ সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর পাড়ের বিভিন্ন চরে। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জেলে-মহাজন,শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকবে দুর্গম এ চরাঞ্চল। আর এ শুঁটকী খাতে একদিকে বনবিভাগের কোটি কোটি টাকার সরকারী রাজস্ব আয় ও অন্যদিকে কযেক লাখ লোকের জীবিকা নির্ভর করে সাগর চরের শুটকি ব্যবসার উপর।
শুঁটকি মৌসুমকে টার্গেট করে ৩/৪ মাস আগে থেকেই ব্যাংক বা এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জাল-নৌকা ঠিক করে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন জেলেরা। তবে এবার ইলিশ আহরনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয় শুঁটকী মৌসুমী জেলেদের। আর এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগ মুর্হুতে রবিবার সকাল থেকেই উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা সাগরে যাওয়ার জন্য মোংলার মেরিন ড্রাইভ সড়কের নদীর পাড় চিলা খাল ও চিলা সংলগ্ন পশুর নদীর পাড়ে এসে জড়ো হয়।
সাতক্ষীরা আশাশুনি এলাকার জেলে জামশেদ আলী জানান, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকলে টানা ৫ মাস মাছ ধরতে পারবো। প্রতি মৌসুমে নৌকা প্রতি ২০০ মণ শুটকী আহরণ করা সম্ভব হয়।
দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সাগরপাড় উপকুলীয় অঞ্চলের শুঁটকী মৌসুমে জেলেরা লোকজন, জাল-নৌকা ও মৎস্য আহরণের সরঞ্জম নিয়ে দুবলার আলোর কোলে সাগর পাড়ের জেলে পল্লীতে ছুটে যাচ্ছেন। এসকল শুটকী আহরনকারী জেলেদের কঠোর নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
পুর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, এবারে দুবলার চর বা অন্য চরে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ এবং বনজ সম্পদ দিয়ে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। জেলে ও মৎস্যজীবিরা পাস-পারমিট ছাড়া সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও জেলেদের কাছ থেকে যদি সুন্দরবন বিভাগের কেউ অবৈধভাবে টাকা আদায় করে থাকেন এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারী রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বনবিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায় জেলেদের সমুদ্র যাত্রা ঘিরে বনবিভাগের সকল টহল ফাঁড়িকে আগ থেকেই সতর্ক থাকার পাশাপাশি অবৈধ প্রবেশকারীদের ঠেকাতে টহল বৃদ্ধিসহ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪ অক্টোবর রবিবার রাত থেকেই চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। অপর দিকে সমুদ্র ও দুবলাগামী জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পশুর নদী সহ আশপাশের এলাকায় টহল দিচ্ছে কোস্টগার্ড নৌ পুলিশ।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮