
জুরাইস ইসলাম মেহেরপুর ।।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ১ নং কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৭নং ওর্য়াড ধালা গ্রামে সোমবার সকালে দুই ভাই নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি থানায়। গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপন করেছে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতসহ সাধারণ নারী-পুরুষ। মরদেহ ময়না তদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং সোমবার রাতেই পারিবারিক ভাবে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গ্রেফতার ও হয়রানী এড়াতে গ্রাম ছেড়েছে মন্তব্য করেছেন গ্রামের বৃদ্ধ কয়েকজন মানুষ। পুলিশ বলছে অহেতুক কেউ হয়রানীর শিকার হবেনা এবং দোষীদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে।
সরেজমিনে; ধলা গ্রাম যেনো শ্মশানে পরিণত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দোকান-পাট যে স্থানগুলোতে মানুষের সমাগম হতো সেখানে বা রাস্তাঘাটও জনশূণ্য। পুরো গ্রামে কয়েকশত ঘর বাড়ি থাকলেও শুধুই নিহতের পরিবারে স্বজনদের আহাজারি। দুইজনকে হারিয়ে নিহতের পরিবারের অনেকেই বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। দু’একটি বাড়ির সামনে বসে আছেন বৃদ্ধ মহিলা। সবারই মুখে আতংকের ছাপ সেই সাথে চোখের পানি ছল ছল করছে। বাড়ির প্রাচিরে হেলান দিয়ে বসে থাকা বৃদ্ধদের কাছে এগিয়ে গেলেও কথা বলতে চান না তারা। দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের প্রহর গুনছেন বসে বসে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারি দুই মেম্বার প্রার্থী আজমাইন হোসেন টুটুল(বর্তমান মেম্বার) ও উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে টুটুলের মামাতো দুই ভাই সাহাদুল ইসলাম ও জাহারুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আতিয়ার রহমানের লোকজন। এঘটনায় মেম্বার প্রার্থী টুটুল ও নারীসহ আন্তত ২০ জন আহত হন। হতাহতদের অবস্থা বিবেচনায় কুষ্টিয়া ও রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তবে গ্রামে পুলিশ, র্যাব, ডিবি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে গ্রামে অবস্থান করা ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত আটক ব্যাক্তিদের থানা হেফাজতেই রাখা হয়েছে বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
আজমাইন হোসেনে টুটুলের বোন রেক্সোনা খাতুন বলেন,আতিয়ার রহমানের লোকজনের আতর্কিত হামলায় ২০১০ সালে টুটুলের ভাই সেন্টুকে কুপিয়ে হত্যা করে। সেন্টু হত্যা মামলাটি আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৭ সালে মেজ ভাই এনামুল হক নইলু কে নবীনপুর রাস্তায় রাতের আধারে বেরিকেড একা পেয়ে আতিয়ার রহমান ও তার লোকজন কুপিয়ে খুন করে। সেই হত্যা মামলায় আতিয়ার রহমানকে প্রধান আসামী করে বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটির স্বাক্ষি গ্রহন চলছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে অংশ গ্রহন করে আমার ভাই টুটুলের সাথে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। এবারও তারা দুজনই প্রতিদ্বন্দীতা করছে। সোমবার সকালে আমার ভাই টুটুল মহল্লার মধ্যে ভোট চাইতে গেলে আতিয়ার রহমান ও তার লোকজন টুটুলের উপর হামলা করে। এ খবর পেয়ে আমার মামাতো দুই ভাইসহ লোকজন এগিয়ে গেলে আতিয়ারের লোকজন দেশীয় আস্ত্র নিয়ে লোকজনের উপর আতর্কিত হামলা করে। এ হামলায় আমার আপন মামাতো দুই ভাই সাহাদুল ও জাহারুল নিহত হয়। আতিয়ার বাহিনীর হাতে একই পরিবার বা বংশের ৪ জন খুনের ঘটনায় পুরো পরিবারই ধ্বংশের মুখে।
নিহত জাহারুলের বোন সুচিন্তারা খাতুন বলেন, জাহারুলের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে শাকিল আহমেদ বিদেশ থাকে। মেয়ে চম্পা অনার্স পড়ছে। জাহারুলের স্ত্রী সেফালী খাতুন গুরুতর আহত হয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তি। সাহাদুলের এক ছেলে এক মেয়ে জাহিদুল ও সুবর্ণা। জাহিদুল বিদেশ থাকে এবং সুবর্ণা স্বামীর সংসারে। পরিবারের সকলেই আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এখনো মামলা করা হয়নি। এছাড়া আমাদের এখন রাস্তায় বের হতে পারছিনা। কারন আতিয়ারের লোকজন এলাকাতেই আতœগোপনে আছে। যে কোনো সময় আবারও হামলা চালাতে পারে এমনকি বাড়ি ঘর লুট করতে পারে। এর আগেও এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
গাংনী থানার (ওসি) তদন্ত শাহ আলম জানান, নিহত দুই জন সাহাদুল ইসলাম ও জাহারুল ইসলামের মরদেহ ময়না তদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পারিবারিক ভাবে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আফিসার ইনচার্জ বজলুর রহমান জানান,নিহতের আপন জনেরা বিভিন্ন হাসপাতালে থাকায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে মামলা হলে জানানো হবে। আটককৃতদের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার রাফিউল আলম জানান, গাংনীর ল²ীরানায়নপুর ধলা গ্রামের দুই খুনের ঘটনায় নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে পুলিশি পাহারা জোরদার করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর পরই আতংকে এলাকা পুরুষ শুন্য হয়েগেছে। সাধারণ মানুষ হয়রানী না হয় সে বিষয়ে পুলিশ সজাগ রয়েছে। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন।