
জুরাইস ইসলাম, মেহেরপুর প্রতিনিধি।।
মেহেরপুর জেলায় তিনটি উপজেলার সবজির কদর বাড়ছে। এজেলার উৎপাদিত সরজিও বাঁধাকপি এবং ফুলকপি দেখতে সুন্দর,খেতে সু-স্বাদু। জেলার উৎপাদিত বাধাঁকপি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা পুরুন করে আসছে বহুবছর ধরে। শুধু নিজের দেশেই নয় বিশ্ব বাজারেও বাড়ছে মেহেরপুর জেলার কপির চাহিদা । দেশের বাজারে পরিচিত সবজি চাষ খ্যাত মেহেরপুর জেলার চাষিদের বইছে সুবাতাস। তবে নিরাপদ সবজি হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছে মেহেরপুর জেলার চাষিদের উৎপাদিত নিরাপদ এ সবজি। মেহেরপুরের বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে যাচ্ছে। এই রপ্তানীতে সবজি চাষের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিবিভাগ।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে নিরাপদ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মেহেরপুর। এ জেলায় সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ হয়। যা বিদেশে বেশি বেশি রপ্তানী করতে পারলে চাষিরা যেমন উপকৃত হবে তেমন আর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। এ লক্ষে মেহেরপুরের চাষিরা ১ হাজার হেক্টর জমিতে কীটনাশক সহনশীল ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করেছেন । গত বছরে ৫০০ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়েছিল এশিয়া মহাদেশর তিনটি দেশে। চলতি মৌসুমে চারটি দেশ ১৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপির নেয়ার চাহিদা দিয়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। সে মোতাবেক সরবরাহ করা হবে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে। কৃষকদের কাছ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করছেন রপ্তানীকারকরা। ক্ষেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে রপ্তানী উপযোগী করা হচ্ছে বাধা কপি। রপ্তানীকারকদের মাধ্যমে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষক তবারক হোসেন জানায়,এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুক্তিবদ্ধ বেশ কয়েকজন কৃষক। রপ্তানীকারকরা কৃষকের জমি থেকেই নিরাপদ বাঁধাকপি সংগ্রহ করেছেন।
কৃষক রফিকুল জানায়, বিদেশে আরো বেশি সবজি রপ্তানী করতে পারলে আমাদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায়্যমুল্য পাব। সে ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগীতা প্রয়োজন।
কৃষক আয়ুব আলী জানায়,শুধু বাধাকপি নয় মেহেরপুর জেলায় সব ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু দেশের বাজার ছাড়াও বিদেশে পাঠানো সম্ভব হলে আমারা আরো বেশি লাভবান হবো। বর্তমানে সার, বীজ ও বিষের দাম বৃদ্ধি হওয়াই কৃষিতে লাভ হচ্ছেনা। দুই বছর ধরে আমাদের কপি দিদেশে যাচ্ছে ।
বিদেশে আমাদের কপির চাহিদা অনেক ভাল। আরো ব্যাপক ভাবে বাজার ও চাহিদা বাড়াতে হবে।
নাজ এন্টার প্রাইজ ও এগ্রো ফ্রেশ সহ বেশ কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের জমি থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ শুরু করেছে রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান কৃষি অফিসের সহায়তায় শুধুমাত্র মেহেরপুরের দুটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ করছেন।
নিজের দেশের উৎপাদিত সবজি বিশ্ব বাজারে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বেড়েছে বলে জানান শ্রমিক সর্দার বাবুল হোসেন।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাজ এন্টারপ্রাইজের সত্বাাধিকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে আমাদের জেলায় উৎপাদিত বাধাঁকপির মুল্য থাকলেও শেষের দিকে এসে কৃষকরা একেবারেই মুল্য পাইনা। অনেক সময় পরিবহন খরচ হয়না। এসময় অন্যদেশে রপ্তানি করে কৃষূকরা লাভবান হচ্ছে। তবে সরকারি ভাবে অন্যাণ্যদেশে এর বাজার তৈরী করলে কৃষকরা উপকৃত হবে। এ বছর রপ্তানীতে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানী করা হয়েছিলো। এবছর নতুন দেশ হিসেবে তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়া রপ্তানী করা হচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খা বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এবছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা। কোনভাবেই যেনো এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের বাজারের চাহিদা পুরন করে উদ্বৃত্ত সবজি রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। বিশ্ব বাজারে জেলার সবজির চাহিদা বাড়াতে চাষিদের নানা ভাবে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।