জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি।।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গত প্রায় এক মাস ধরে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। বৃষ্টির অভাবে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। চারদিকে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়। এর মধ্যে গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে উপজেলার নলুয়ার হাওর সহ ছোট-বড় সকল হাওরের বোরো জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের থোড় বের হতে থাকে। অনাবৃষ্টিতে (স্থানীয় ভাষায় খরায় ধরেছে) এসব ধানের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। ব্রি-২৮ জাতের ধানে আশারুপ ফলন না হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা বিচলিত হলেও ব্রি-২৯ জাতের ধানের উপর ভরসা বেড়ে যায়। এর মধ্যে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্রি-২৯ জাতের ধানেরও থোড় বের হতে থাকে। এ সময়ের মধ্যেও বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষককূলে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিন বাড়তে থাকে শঙ্কা। বি-২৮ এর মতো যদি ব্রি-২৯ ধানও খরায় নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে মাত্র কয়েক দিনে ব্রি-২৯ জাতের ধানের থোড়ের মাথা সামান্য হলেও ঝলসে গিয়ে কিছু ক্ষতি হয়। তা দেখে কৃষকরা আরো দিশেহারা হয়ে পড়েন। কারণ তুলনামূলক ভাবে জগন্নাথপুরে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্রি-২৯ জাতের ধান বেশি আবাদ হয়ে থাকে। এসব ধানে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের ভরসাও বেশি। তাই শুধু বৃষ্টির অভাবে বোরো ধানের সমুহ ক্ষতির আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েন কৃষকরা।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের উদ্যোগে বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরণি বিতরণ করা হয়। সেই সাথে সনাতন ধর্মের কৃষকরাও প্রার্থনা করেন। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জের পুরনো সংস্কৃতি অনুযায়ী বৃষ্টির জন্য “বাগাই মাগা” হয়। গ্রামের ১৫/২০ জন কৃষক পরিবারের মানুষ সমবেত হয়ে দল বেধে সবার হাতে লাটিসোটা নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে “আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই” এমন সারিগানে মাটিতে লাটিসোটা দিয়ে আঘাত করে বৃষ্টি ভিক্ষা চাওয়া হয়। এ সময় বাড়ির নারী-পুরুষ জনতা এ বাগাই দলকে চাল, ডাল সহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য প্রদান করেন। বাগাই দল এসব খাদ্য দ্রব্য নিয়ে শিরণি তৈরি করে হাওরে ও মাঠে গিয়ে বিতরণ করে আল্লাহ পাকের কাছে বৃষ্টি কামনা করেন।
ঠিক এভাবেই গত প্রায় এক সপ্তাহ গেছে। যে যেভাবে পারছেন, বৃষ্টির জন্য আর্তনাত জানিয়েছেন। অবশেষে মহান আল্লাহ পাকের অশেষ দয়ায় ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে জগন্নাথপুরের উপর দিয়ে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী ঝড়ো হাওয়া সহ মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাত হয়। এ উপকারি বৃষ্টিতে অগ্নিমূর্ত প্রকৃতি শান্ত হয়েছে। শুধু বোরো ধান নয়, সব ধরণের শাক-সবজি ও বৃক্ষরাজির উপকার হয়েছে। এমন অভিমত কৃষক সহ সাধারণ মানুষের। তাই কাঙ্খিত বৃষ্টি পেয়ে কৃষককূলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকে আল্লাহ পাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন।
২৫ মার্চ শুক্রবার সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাওরে দেখা যায়, বৃষ্টি পেয়ে থোড় ধান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ধানের গোছা যেন আনন্দে ঝলঝল করছে। এ সময় হাওরে জমি দেখতে আসা কৃষকদের মধ্যে অনেকে জানান, এখন বৃষ্টি না হলে, ব্রি-২৮ জাতের ধানের মতো ব্রি-২৯ জাতের ধানও নষ্ট হয়ে যেত। বৃষ্টি হওয়াতে রক্ষা হয়েছে। এখন আশা করছি, জমিতে বাম্পার ফলন হবে। এ সময় বৃষ্টির জন্য তারা গত সপ্তাহ ধরে কি কি করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮