আমিরুল হক, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি।।
শ্রমিক সঙ্কটে যখন উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা দুরুহ হয়ে পড়েছিল ঠিক তখনই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। উৎপাদনে গতি আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কারখানার টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট (টিএলআর) শ্রমিক। কারখানার ট্রেড ইউনিয়নগুলো সঙ্কট নিরসনে স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগের দাবি করেছে।
কারখানা সূত্র জানায়, ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি এখন মাত্র ২০ শতাংশ জনবল নিয়ে চলছে। দুই হাজার ৮৬৯ জন লোকবলের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭২৮ জন শ্রমিক-কর্মচারী। সঙ্কট লাঘবে উপরের নির্দেশে দেড় মাসের জন্য ৩০০ অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই শ্রমিকরা চলতি মাসে (জুন) কাজে যোগ দিয়েছেন। অবশ্য এর আগে আরও ২০০ জন অস্থায়ী শ্রমিক ওই কারখানায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ফলে কারখানায় উৎপাদনে কিছুটা গতি ফিরেছে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, আগামী ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে যাত্রী সেবা বাড়াতে কমপক্ষে ৬৫টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা নিয়মিত কাজের অতিরিক্ত। সৈয়দপুর কারখানায় প্রতিদিন ৩টি ইউনিট কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থাৎ দুই ইউনিটে একটি রেলকোচ। প্রতি কর্মদিবসে দেড়টি কোচ মেরামত হয় বিশাল ওই কারখানায়।
একই সূত্র জানায়, ২০১৯-১৮ অর্থবছরে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রতিদিন কোচ মেরামত হয় ২ দশমিক ১৮ ইউনিট। ২০১৮-১৯ অথবছরে যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫৩ ইউনিট। ২০১৯-২০ সালে তা আরও বেড়ে হয় ২ দশমিক ৬৩ ইউনিট। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয় ২ দশমিক ৮৪ ইউনিট। আর চলতি অর্থবছরের এই পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১০ ইউনিটে।
সরজমিনে রেলওয়ে কারখানায় গেলে দেখা যায়, কারখানার ২৯টি শপেই (উপ-কারখানা) শ্রমিকরা কর্মব্যস্ত। তাদের কাজ তদারকি করছেন সব ইনচার্জরা। মাঝে মধ্যে টহল দিচ্ছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শত সঙ্কটের মাঝেও উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ওই তৎপরতা। সামনে ঈদ আসছে। তাই বেশি বেশি কাজ করে ঘাম ঝড়াচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানার মেশিন টুল রুম শপে ইতিপূর্বে কাজ করতেন মিস্ত্রী আবু সালেহ। অবসরে যাওয়ার পর অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে তিনি একই শপে নিয়োগ পান। কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, লোকবল সঙ্কটে কারখানার অবস্থা শোচনীয়। আমরা যারা অস্থায়ীভাবে আছি, তারা স্থায়ী শ্রমিকদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। একইভাবে ক্যারেজ শপ, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং শপ, মেশিন শপ, পেইন্ট শপ সবখানে। কারখানায় কোচ মেরামতের পাশাপাশি মালবাহি গাড়ি ও ১২ হাজার রকমের যন্ত্রপাতি তৈরি হয় রেলওয়ে কারখানায়।
কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, রেলওয়ে কর্মচারীদের পোষ্য ও কিছু দক্ষ শ্রমিককে টিএলআর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এখানে। তারা ভালো কাজ করছেন বলে জানান মিস্ত্রী আবু সালেহ।
শ্রমিক লীগ কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে লোকবল নিয়োগের বিকল্প নেই। তিনি অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়মিত করতে রেল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমানের বলেন, লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। শিগগিরই আমরা কাঙ্খিত জনবল পাবো।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মুহাম্মদ কুদরত-ই খুদার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমান সরকার রেলবান্ধব। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা যাবতীয় সঙ্কট নিরসনে সরকার কাজ করছে। সৈয়দপুরে আরও একটি নতুন কোচ নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, কারখানায় দক্ষ লোকের প্রয়োজনে কারখানার অবসরে যাওয়া লোকজন কে দিয়ে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।রর
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮