
আমিরুল হক, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি ।।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার, পিকআপ, মাইক্রোবাস উপকমিটির অফিসে সন্ত্রাসী হামলা করে ভাঙ্চুর, মারপিট ও অর্থ লুটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সাম্প্রতি এই অফিসে ঢুকে একদল যুবক সন্ত্রাসী কায়দায় এ হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত এক মাইক্রোবাস চালক হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন এবং পুলিশ এক যুবককে আটক করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি মিমাংসিত ঘটনাকে নিয়ে এমন সন্ত্রাসী কান্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া নিজেরাই অপরাধ করে শালিস বৈঠকের প্রাক্কালে মারপিট করার কোন মানে হয়না। তাহলে বিচার চেয়ে অভিযোগ দিলে কেন। কেনইবা, অনাকাঙ্কিত ঘটনা ঘটিয়ে একটি শ্রমিক অফিসে এসে ভাঙ্চুর লুটপাট করার মত দু:সাহস দেখালো। এই টা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই ঘটনার সাথে জরিতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
জানা যায়, গত রোববার দুপুর ১২টায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেল ঘুমটিতে ট্রেন যাওয়ার সময় মাইক্রোবাস নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন চালক সামসুল হক। এমন সময় পিছন থেকে এসে পার্শবর্তী হাতিখানা এলাকার মোসাদ্দেক আলী বাই সাইকেল দিয়ে মাইক্রোবাসের পিছনে ও ডান পাশের বডিতে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের কয়েক জায়গায় রং চটে যায় ও চাপ লেগে দেবে যায়। ফলে মাইক্রোবাস চালক গাড়ি থেকে নেমে বাই সাইকেলটি আটক করার চেষ্টা করেন। এ সময় দুইজনের মাঝে হাতাহাতি হয়। তাৎক্ষণিক দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আব্দুল খালেক ছুটে এসে বিষয়টা মিমাংসা করে দেন। এই ঘটনার জের ধরে সাইকেল চালক মোসাদ্দেক আলীর ছেলে মো. আজিম খান রানা (২৮) মাইক্রো চালককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে ওইদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোবাইলে বার বার ঘুমটি এলাকায় আসার জন্য বলেন। কিন্তু বিষয়টা মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় সামসুল হক সেখানে যায়নি। এরপর রানা ওই চালকের নামে লিখিত অভিযোগ দেয় শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে।
এরই প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে মিমাংসার জন্য বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সে অনুযায়ী চালক সামসুল আলম রাত সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু সড়কের সৈয়দপুর পাইলট হাইস্কুল সংলগ্ন অফিসের সামনে এসে মাইক্রোবাস বন্ধ করে রাস্তায় নামা মাত্রই অতর্কিত ঝাপিয়ে পড়ে রানাসহ ৭/৮ জন যুবক।
এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারায় সামসুল আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখন হামলাকারীরা পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। আহতাবস্থায় সামসুল হক চিৎকার করলে এক পর্যায়ে একজন গলা চেপে ধরে আরেকজন পকেট হাতরে গাড়ি ভাড়ার ১৬ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। পরে অফিসে শ্রমিকরা দ্রæত ছুটে এসে প্রতিবাদ করলে যুবকেরা মারমুখী হয়ে উঠে। তর্ক বিতর্ক করতে করতে তারা শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে ঢুকে পড়ে।
এসময় এই শাখার সম্পাদক মো. মালেক সরকার এমন বিশৃঙ্খলা করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করলে তাঁরা সন্ত্রাসী কায়দায় চেয়ার টেবিল ভাঙ্চুর শুরু করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির সৃষ্টি হয়। চরম অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে কৌশলে সম্পাদকের টেবিলের ড্রয়ারে রক্ষিত ৬০ হাজার লুট করে আসবাবপত্র এলোমেলো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও রানা ধরা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক থানায় নিয়ে যায়।
গুরুতর আহত মাইক্রো চালক সামসুল হককে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনও সঙ্কটাপর্ণ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।