মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট)প্রতিনিধি।।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পূর্নিমার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে দিনে-রাতে দু’বার পানির নিচে তলিয়ে যায় এক সময়ের ছোট ক্যালকাটা খ্যাত মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারসহ নি¤œাঞ্চলের ২০টি গ্রাম। বেড়িবাধ ভেঙ্গে পাঁচ শতাধিক মাছের ঘেরে প্রবেশ করছে অতিরিক্ত পানি। পানির তোরে ভেঙ্গে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও কাঁচা-পাকা রাস্তা। ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
পূর্ণিমার তিথির প্রভাবে জোয়ারের পানিতে এ ভাবে দিনে এবং রাতে দু’ বার তলিয়ে যায় পৌর শহরসহ পানগুছি নদীর ২ তীরবর্তী ৬টি ইউনয়নের ২০ টি গ্রামের বিস্তৃর্ণ জনপদ। ফলে স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি- বেসরকারি দাপÍরিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।
বেলা ১১ টার দিকে শহরের কাপুডিয়াপট্টি সড়ক, কাঁচা বাজার, কেজি স্কুল সড়ক, ফেরীঘাট সংলগ্ন কালাচাঁদ মাজার এলাকা, সানকিভাঙ্গা, বারইখালী, গ্রাম প্লাবিত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে গত ৪ দিনে। দুপুরের রান্না হচ্ছে না বারইখালী ফেরিঘাট এলাকা ও খাউলিয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়ীয়া গ্রামে। পানিতে তলিয়ে গেছে ওই সব এলাকার রানাœঘর। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পূর্নিমার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে ২০ গ্রাম।
সরেজমিন শুক্রবার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গিয়ে দেখা দেখা গেছে, সেখানকার অনেক পরিবার তাদের ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, গাবতলা গ্রামটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় পানির প্রবাহটা সেখানে বেশি। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার নিয়মিত পানির সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছে। দিনে ও রাতে ২ বার পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ওই গ্রামের কোন বাড়িতে রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। অপর দিকে খাউলিয়া ইউনিয়নে দেখা গেছে, সন্ন্যাসী হয়ে কেয়ার বাজার পাকা রাস্তাটি পানির চাপে ভেঙ্গে সেখানে একটি খাল হয়ে গেছে। খাউলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে ৬ টি রাস্তা পানির তোরে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টি এম রিপন জানান, তার ইউনিয়নের পশ্চিম বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রামের ২ শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে। জিউধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশা জানান, তার ইউনিয়নে পালেরখন্ড, কাকড়াতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা গ্রামে ৫০ টার মত ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কাচা ঘর ভেঙ্গে গেছে। হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান বলেন, তার ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা, পাঠামারার শতাধিক মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির চাপে এসব ঘেরের বেড়ি ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে বেড়িয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শতাধিক ঘের ব্যবসায়ী। বদনীভাঙ্গার বিএস রতমতিয়া দাখিল মাদ্রাসা হয়ে সেকেন্দার আলীর দোকান পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ইট ¯েøালিং রাস্তা ও মুসলিম ইট ভাটা হয়ে পাঠামারা হাজ্বিগঞ্জের ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটিও ভেঙ্গে পড়েছে।
এদিকে পঞ্চকরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার জানান, সোনাখালী ¯øুইজগেট হয়ে দেবরাজের ৭ কিলোমিটার মিনি বেড়িবাঁধ পানির চাপে হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।
এ সর্ম্পকে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বিনয় কুমার রায় বলেন, এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানাগেছে। সংশ্নিট এলাকায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ঘাট, কৃষি ও মৎস্য ঘেরগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে একটা তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন বলেন, খাউলিয়া ইউনিয়নের কুমার খালী হয়ে বহরবুনীয়া ইউনিয়নের খষিয়াখালী পর্যন্ত নদী প্রটেকশস ওয়াল করার প্রস্তাবটি একনেক সভায় পাস হয়েছে। খুব শিগ্রই কাজ শুরু হবে। নদী প্রটেকশন ওয়াল হলে এভাবে আর সাধারণ মানুষকে পানিতে ডুবতে হবেনা।#
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮