
রাজধানীর গুলশান ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। এরা হলেন, তোফায়েল আহমেদ(২৮), মোঃ আক্তার হোসেন (৩৮),মোঃ আনিছুর রহমান(৩৬), ও মোঃ রাসেল (৩০)।এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে ১৬ টি পাসপোর্ট, ৩ টি চেক বই, ০৪ টি স্ট্যাম্প, ০৫ টি মোবাইল ফোন, ০৪ টি বিএমইটি কার্ড, ০৪ টি রেজিষ্টার উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, আজ (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভুক্তভুগীদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, চক্রটি প্রথমে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার হতে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে থাকে। কিছুদিন পরে এদের সহযোগীরা ভিকটিম ও অভিবাবকদের বিদেশ হতে ফোন দিয়ে আশ্বস্থ করে। যে,আসামীদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে তারা খুব ভাল থাকবে। এবং অনেক অর্থ উপার্জন করে তারা তাদের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হবে। বিদেশ হতে ফোন পাওয়ার পর ভিকটিম এবং অভিবাবকরা আরো অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠেন। উক্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন খরচ,ভিসা খরচ,মেডিকেল খরচ, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি খরচের কথা বলে আসামীরা ধাপে ধাপে ভিকটিমদের নিকট হতে টাকা আত্মসাৎ করতে থাকে। উচ্চ বেতনে চাকুরী করে বিদেশে গিয়ে ভাগ্য বদলের আশায় ভিকটিম ও তাদের অভিবাবকরা স্বপ্নে বিভোর থাকেন। ফলে উক্ত সময়ে ভিক্টিমরা আসামীদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন না। অন্যদিকে আসামীরা ফ্লাইটের পূর্বে ভিকটিমের নিকট তার পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা টিকেট কোন কিছুই হস্তান্তর করে না। আসামীদের চাহিদা মাফিক ভিকটিম এবং অভিবাবকদের নিকট হতে অর্থ আদায় শেষ হলে আসামীরা একটি নির্দিষ্ট তারিখে কাপড় চোপড়সহ লাগেজ নিয়ে ভিকটিমকে বিমান বন্দরে হাজির হতে বলে। বিদেশে ফ্লাইটের দিন বিমান বন্দরে প্রবেশ গেইটে ভিকটিমের নিকট তার পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকেট হস্তান্তর করা হয়। বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর ভিকটিম বুঝতে পারেন তাকে ভ্রমন ভিসায় বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। তখন আসামীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা ছাড়া ভিকটিমের কিছুই করার থাকে না। পরে বিদেশে গিয়ে তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়।
র্যাব ৩ এর কম্পানী কমান্ডার বীণা রানী দাস জানান,ধৃত আসামীদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোন লাইসেন্স নাই। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশন হতে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সিটি এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সি নামে মানবপাচার ব্যবসা করে আসছে। স্বল্প সময়ে,বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ভিকটিমরা বিদেশ গিয়ে কোন কাজ না পেয়ে সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার এবং আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হলেও তাদের কোন অনুশোচনা নেই।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায় যে,তারা সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উক্ত চক্রের অপরাপর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে।