
রাবি প্রতিনিধি।।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিনেট ভবনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) এর মেয়র এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবির উপচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হেনার পুত্র ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন বলেন, জেল জত্যায় যে চার নেতা শাহাদত বরণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে শহীদ কামরুজ্জামান রাজশাহীতে শায়িত আছেন। তার শ্রদ্ধাঞ্জলিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মাত্র আড়াই মাসের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। এই বাংলাদেশ যত রক্তের ওপর সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এতো রক্ত দিয়ে সৃষ্টি হয়নি। এছাড়াও এ দেশের অসংখ্য মানুষ যারা বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের হাতে জীবন দিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন অথবা পঙ্গু হয়েছেন তদেরকেও আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি আরও বলেন, খুনিদের মধ্যে একাধিক সেনা অফিসার যারা বরখাস্ত হয়েছিলেন, তাদের বাড়িতে তারা উর্দু ভাষায় কথা বলতেন। কর্নেল ফারুকের বাড়িতে বাংলা অপেক্ষা উর্দুতে কথা বলতে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কিংবা জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ড হোক যারা এ হত্যাকাণ্ড থেকে যারা লাভবান হয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার তারা জীবিত থাক বা মৃত। আমরা একটা পর্যায়ে এসে বেচে গেছি। সামনের দিনগুলি যেন আমরা নির্বিঘ্নে চলতে পারি। আমরা যে জায়গায় পৌঁছেছি সে জায়গা থেকে সরে যাওয়ার পথ নেই। বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আরো বেশ কিছু সময়।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্ট এবং ৩ রা নভেম্বরের ঘটনার মধ্যদিয়ে আমাদের নায়কদের মৃত্য ঘটেছে এবং প্রতিনায়কদের ছায়া গাড়ো হয়েছে। এই প্রতিনায়করা হলেন মোশতাক আহমেদ, জিয়াউর রহমান, খালেদাজিয়া, তারেক রহমান। মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণের পর তার সরকারের বৈধতার জন্য চার নেতার সহোযোগিতা চেয়েছিলো। মোশতাক তার তিন সহযোগীকে পাঠিয়েছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং সৈয়দ মনসুরের কাছে। তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বলেছিলো এই সরকারের কোনো পদ পদবী তাদের দরকার নেই’।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যে ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতা এই জাতীয় চার নেতার হত্যা।বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার জন্য যে পনেরো জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে এখনো দশ জনকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাদেরকে যেন দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়। তাদের হত্যাকাণ্ড আমাদের ব্যর্থতা। কারণ আমরা জাতি হিসাবে তাদেরকে রক্ষা করতে পারিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মো. অবায়দুর রহমান প্রামাণিক। এসময় বিভিন্ন অনুষদের অধিকর্তাবৃন্দ, বিভাগের সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর কারাগরে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতা হত্যার দিনটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।