স্টাফ রিপোর্টার ভোলা।।
ভোলার রাজাপুরে চিকিৎসকের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হলেন আল- আমিনের ছোট শিশু সামিরার। জানা যায়, সাত মাসের শিশু সামিরার গলায় উঠেছিল বিষফোঁড়া। এর চিকিৎসার জন্য নাতনিকে নিয়ে শহরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন দাদা আব্দুল মালেক। পথে দেখা হয় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. হোসেনের (৪৬) সাথে। তিনি কম করচে নিজের দোকানে বিষফোঁড়ার চিকিৎসার আশ্বাস দেন। দাদা তাতে রাজি হলে শিশুটির শরীরে পুশ করা হয় তিনটি ইনজেকশন। তখনই সামিরার শরীর নীল বর্ণ ধারণ করে। কিছুক্ষণ পর শিশুটির মৃত্যু হয়। পালিয়ে যায় মো. হোসেন।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ভোলা সদর উপজেলা রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার ইসলামিয়া মেডিকেল হলের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা না করার জন্য মো. হোসেনের পরিবার ও স্বজনরা টাকার প্রলোভন দেখায়। কিন্তু শিশুটির পরিবার ঘটনার একদিন পর রোববার (৬ নভেম্বর) চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু আইনে ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলার বাদী শিশুর বাবা আল-আমীন। তিনি ওই ওয়ার্ডের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
পুলিশ বলছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চলমান রয়েছে।
শিশুটির দাদা আব্দুল সাদেক মা সোহানা বেগম ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সামিয়াকে নিয়ে কথিত ওই ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তিনি সামিয়াকে ভোলা না নিয়ে তাঁর কাছে কম খরচে চিকিৎসা করাতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু চিকিৎসক পরপর তিনটি ইনজেকশন সামিয়ার শরীরে পুশ করতেই তাঁর পুরো শরীর নীল আকার ধারণ করে। এরপর ব্লেড দিয়ে তাঁর ফোঁড়ার জায়গা কাটা শুরু করলেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় কোনো মামলা না করার জন্য শিশুটির দাদা আব্দুল সাদেককে অনুরোধ জানায় স্থানীয় ফারুক মাষ্টার ও রমিজ উদ্দিন নামে এক ইউপি সদস্য। ফারুক মাষ্টার ওই ইউনিয়নের কন্দকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক এবং রমিজ উদ্দিন একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। হোসেন পল্লী চিকিৎসার পাশাপাশি কন্দকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় সহকারী মৌলবি হিসেবে শিক্ষকতা করেন।
ঘটনার পর শিশুর পরিবারকে মামলা না করার জন্য অনুরোধ জানান অভিযোক্ত চিকিৎসক হোসেনের জামাতা তারকে। তিনিও উপজেলার ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের রাস্তার মাথা বাজারের আল-কারীম মেডিকেল হলের পল্লী চিকিৎসক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা বাজারের এক ব্যবসায়ি জানান, হোসেনের জামাতা তারেক, ফারুক মাষ্টার ও ইউপি সদস্য রমিজ উদ্দিন গতকাল রাতেও এ ঘটনায় যাতে মামলা না হয় সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। এমনকি মামলা হওয়ার পর হোসেনকে তাঁরা আত্নগোপনে রেখেছেন। তাদের সঙ্গে নতুন একটি ফোন নাম্বারে নিয়মিত হোসেনের যোগাযোগ হচ্ছে।
ঘটনাটি দামাচাপার বিষয়ে জানতে চাইলে, হোসেনের জামাতা তারেক কৌশলে তাঁর ফার্মেসি বন্ধ করে চলে যান। ফারুক মাষ্টার ও ইউপি সদস্য রমিজ উদ্দিনও ঘটনাটি দামাচাপার বিষয়ে এড়িয়ে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইমাম হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ দুপুরে তিনি হোসেনের ইসলামিয়া মেডিকেল হলে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষ করেছেন। ঘটনাটির আরও তদন্ত চলমান রয়েছে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, শিশুটির ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত শেষে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮