
মেহেরপুর প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া-গাংনী সড়কের পল্লী বিদ্যুত সাব- স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধিন থাকার পরও বিরোধপুর্ণ জমিতে জোর পুর্বক বাড়ি ঘর নির্মাণ করছেন একটি পক্ষ। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্য টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা এমনকি জিবনহানী ঘটার আশংকাও দেখা দিয়েছে। তবে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, মোছাঃ ফতেজান নেছার ওয়ারিশ রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং এবং আব্দুল মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং। উক্ত ৫৪ শতক জমির মধ্য মেহেরপুর মুন্সেফ আদালতে ফতেজান নেছার ওয়ারিশগন ২৭ শতক উক্ত দাগে রায়ের বলে মালিক হন। পরবর্তিতে আঃ মোতালেব জেলা জজ আদালতে আপিল করলে জেলা জজের ২য় রায়ে প্রথম রায়টি কারো পক্ষে না দিয়ে স্থগিত করেণ (উভয় পক্ষকে উচ্চ আদালত হইতে ফয়সালা নিতে হবে)। জেলা জজের ২য় রায়ের পর ফতেজান নেছার ওয়ারিশ রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল রুল রিভিশন পিটিশন করেন যাহার মামলা নং ৩৫২৭/২০১২। উক্ত মামলাটি বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রস্তত অবস্থায় বিচারাধীন আছে। উক্ত মামলা নিস্পত্তি না হতেই আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং উক্ত জমিতে জোর পুর্বক ভবন নির্মান কাজ শুরু করেছেন। উক্ত নির্মান কাজকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্য টান টান উত্তেজনার উদ্ভব ঘটেছে। উক্ত নির্মান কাজ প্রশাসন বা আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা না হলে উভয় পক্ষের মধ্য যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা এমনকি জিবনহানী ঘটার আশংকাও দেখা দিয়েছে।
গাংনী বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সূধীজনদের আশংকা, ওখানে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটবে এবং জায়গাটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় বাজারে আইন সৃঙ্খলার বড় ধরণের অবনতি দেখা দিতে পারে। বাজার এলাকার অনেক ব্যাবসায়ী ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে আলাপ করে জানা যায় উক্ত বিরোধপুর্ণ জমিতে নির্মাণ কাজ দ্রæত বন্ধ না করা হলে যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়বে।
জানা যায় ফতেজান নেছার ওয়ারিশগন রেজাউল হক ও সিরাজুল ইসলাম গং এক বছর পুর্বে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মেহেরপুরে উক্ত জমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। আঃ মোতারেবের ওয়ারিশগন জেলা জজ আদালতে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল পিটিশন করলে উক্ত মামলা জেলা জজ কর্তৃক পুনরায় জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মহেদয় উক্ত জমিতে প্রকৃত অবস্থা কি সেটা জানতে চেয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাংনী থানাকে সরজমিনে তদন্ত পুর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে গাংনী থানা উক্ত জমিতে স্বরজমিনে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে তদন্তে (ওসি) গাংনী থানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেণ উক্ত বিরোধপুর্ণ জমিতে নির্মাণ কাজ করলে উভয় পক্ষের মধ্য বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রানহাণীর আশংকা রহিয়াছে।
ওসি গাংনী থানার প্রতিবেদনের উপর আস্থা রেখে মহামান্য জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয় উভয় পক্ষকে সংযত থাকার জন্য এবং উক্ত জমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য ১৪৪ ধারা বহাল রাখেন। আবার উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য জেলা জজ আদালতে আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং আপিল করিলে উক্ত পিটিশনটি নিস্পত্তির জন্য জেলা জজ আদালত কর্তৃক অ্যাডিশনাল জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। অ্যাডিশনাল জজ আদালতে কয়েকবার শুনানির তারিখ থাকলেও শুনানি না হওয়ায় মামলাটি শুনানির পুর্বেই খারিজ করে দেন। উক্ত ১৪৪ ধারা খারিজ হওয়ার পর আ: মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গং এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জমির বাদী পক্ষের সাথে ও এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়। জমির মুল মালিক ইরাদ আলী মোল্লা মেদিনিপুর জমিদার কোম্পানির নিকট হতে বন্দোবস্ত নেওয়া সম্পত্তি। ইরাদ আলী মোল্লার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ দুই ছেলে মোজাহার আলী মোল্লা, আহাম্মদ আলী মোল্লা ও ও এক মেয়ে আকিমন নেছা ওয়ারিশ হন। আহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ হন আ: মোতালেব মোল্লা। পরবর্তিতে আকিমন নেছার অংশ আ: মোতালেব ও মোজাহার আলী মোল্লা কিনে নেয়। এবার মোজাহার আলী তার অংশ উক্ত জমি তার স্ত্রী ফতেজান নেছার নামে দেন মোহর বাবদ উক্ত দাগে ২৭ শতকসহ অন্যান্য দাগ মিলে মোট ১০৭ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রী করে দেয়। তার পর ফতেজান নেছা উক্ত জমি তার তিন ছেলে সিরাজুল, মোফাজ্জেল, ইকরামুলের নামে রেজিষ্ট্রী করে দেন। বর্তমানে রেজিষ্ট্রী সূত্রে তাহারা মালিক। মোতালেব হোসেনের মৃত্যুর পর তার ছেলে হাসান, জিয়া গং ওয়ারিশ সুত্রে বর্তমান উক্ত দাগের ৫৪ শতক জমির অর্ধেক ২৭ শতকের মালিক।
বাদী ফতেজান নেছার ওয়ারিশ সিরাজুল ইসলাম ও রেজাউল গং জানান, তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বিবাদী মোতালেব হোসেনের ওয়ারিশগন হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে ভাড়াটিয়া লোকজন সাথে নিয়ে দিনে ও রাতের বেলায় বিদ্যুতের বাতি লাগিয়ে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেও জানান বাদী পক্ষের লোকজন।
মামলার বিবাদী মোতালেবের ওয়ারিশ হাসান আলী ও জিয়াউর রহমান গংয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি আদালতৈ বিচারাধীন। সেহেতু এখানে থানা পুলিশের কিছুই করার নেই।