
মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বিস্তৃন্ন সরিষা মাঠ থেকে পোশা মৌমাছি দিয়ে ফুল থেকে প্রায় ৫শ’ টন মধু সংগ্রহের লক্ষমাত্রা মাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছে মৌচাষীরা। ইতিমধ্যে সরিষা ক্ষেতের পাশে অন্তত ৩ শতাধিক মৌ খামারী তাদের খামারের মৌ বাক্স স্থাপন করেছে। এই মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছির পরাগায়নের ফলে একদিকে যেমন সরিষার ফলন বাড়ে। তেমনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মধু উৎপাদন হচ্ছে। মৌখামারীরা বলছে মধু উৎপাদন অব্যহত রাখতে ও মৌমাছি বাঁচাতে সরিষা ফুলে কৃষকদের অযাচিত কিটনাশক ব্যবহার বন্ধে কৃষি বিভাগের সচেতনতা জরুরী।
সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমিতে রবি সরিষার চাষাবাদ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি রবি মৌসুমে সরকারিভাবে কৃষকদের বিনামূল্য উন্নত জাতের সরিষার বিজ ও রাসায়নিক সার দেয়ায় জেলায় ৬১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রবি সরিষার আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় আগাম সরিষার ফুল ধরেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। হলুদের চাদরে ঢাকা পড়ছে এখানকার সরিষার মাঠ। এই সরিষা ফুল থেকে পোশা মৌমাছি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শত শত টন মধু সংগ্রহ করে মৌচাষীরা। এবারও সেই লক্ষমাত্রা নিয়ে জেলার উপজেলার মাঠে মাঠে মৌ বক্স বসিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মৌখামারীরা। এসব বক্সের পোশা মৌমাছির দল ভো ভো শব্দে ফুল থেকে ফুলে উড়ে এখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে এসব বক্স থেকে এখনো মধু সংগ্রহ শুরু হয়নি। কয়েক’দিনের মধ্যেই শুরু হবে মধু সংগ্রহ। প্রতি বছর এই প্রক্রিয়ায় খামারীরা শত শত টন মধু আহরণ করে। এই মধু আহরণ করে একদিকে যেমন খামারীরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষকরাও লাভবান হয়। মৌমাছি মধু সংগ্রহের সময় ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়ানোয় ঘটে পরাগায়ন। এতে সরিষার উৎপাদন ১০/১৫ ভাগ বেশি হয়। সরিষা মৌসুমে খামারীদের উৎপাদিত মধু মাঠ থেকেই বিক্রি হয়। মৌসুমের সময় ১লাখ ৫০ হাজার টাকা টন দরে মধু বিক্রি হয়। অন্য সময় আরো বেশি দামে বিক্রি হয়। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী সহ মধু ব্যান্ডিং কোম্পানীরা এই মধুর বড় ক্রেতা। শুধু সরিষা মৌসুমেই একজন খামারী মধু উৎপাদন করে সকল খরচ বাদে কয়েক লাখ টাকা আয় করে। এখানথেকে ও কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত বেকার মানুষের। সম্ভাবনাময়ী মৌখামারে এখন স্বচ্ছল স্বাভলম্বী হচ্ছে বেকার যুবকরা।
বেলকুচি উপজেলার খিদ্রগুফরেখি এলাকার মৌ খাঁ মাড়ি রুবেল শেক জানান আজুগড়া এলাকার সরিষা মাঠে ৩শ’মৌ বক্স বসিয়েছি। এখনো মধু সংগ্রহ শুরু করিনি। আশা করছি এ বছর ৪টন মধু সংগ্রহ করবো।
সিরাজগঞ্জ মৌচাষী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান,আমার খামারে প্রায় ২শ’৫০টি মৌবক্স রয়েছে। মধু সংগ্রহরে প্রস্তুতি নিয়েচি। তবে গত বছর থেকে কৃষকরা জমিতে অধিক ফলনের আশায় সরিষা ফুলে হরমন জাতীয় কিটনাশক প্রয়োগ শুরু করেছে। এতে ফুলে মধু সংগ্রহে গিয়ে মারা যায় মৌমাছি। গত বছর তাদের কোটি কোটি মৌমাছি মারা গেছে। এতে অনেক খামারী চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এবার যাতে কৃষকরা জমিতে কিটনাশক স্প্রে করতে না পারে সেজন্য কৃষি বিভাগের মাধ্যমে দ্রুত সচেতন করতে হবে। নইলে মধু উৎপাদন যেমন কমবে। তেমনি আমরা খামারীরাও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর জানান,আগামী ৩ বছরে জেলায় ৪০ ভাগ তৈল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা সরিষা চাষাবাদে জোড় দিয়েছি। গত বছর জেলায় সরিষার চাষাবাদ হয়েছিলো ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে। এবার ৬১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। সরিষা ফুল থেকে খামারীরা প্রায় ৫শ’টন মধু সংগ্রহ করবে বলে আমরা আশা করছি। এই সময়ে কৃষকরা যাতে সরিষা জমিতে যাতে অযাচিত কিটনাশক স্প্রে না করে সেজন্য সচেতন করা সহ কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।