
দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।
ফুটবল খেলায় পেলে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন, সেটা মানুষের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খেলাধুলার বাইরের জগতেও তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল।
ফুটবলের রাজা পেলের শেষকৃত্য হবে সান্তোসের মাঠে দু’দিনব্যাপী। প্রিয় শহরেই মাঠেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ফুটবলের রাজা পেলে। আর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে প্রিয় সান্তোস স্টেডিয়ামে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে।
ব্রাজিলের সান্তোস ক্লাবের হোম ভেন্যু ভিয়া বেলমিরো স্টেডিয়ামে সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন হবে পেলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। পেলের প্রতি সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন ব্রাজিলীয়রা।– বাসস।
কোলোন ক্যান্সরে আক্রান্ত পেলের চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। এজন্য কেমোথেরাপি দেয়াও বন্ধ করা হয়, কারণ তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান পেলে।
সমাহিত করার জন্য হাসপাতাল থেকে পেলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানে তার দেহ রাখা হবে ২৪ ঘণ্টা। এরপর সান্তোস ক্লাবের প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হবে পেলেকে। তখন ফুটবলের রাজাকে শ্রদ্ধা জানাবেন ভক্ত-সমর্থকরা।
হাসপাতাল থেকে কফিন সান্তোস পর্যন্ত সড়ক পথে পেলের মা সেলেস্তেরের বাড়ির সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বার্ধক্যের কারণে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না পেলের মা। নিজ বাড়িতে সন্তানকে শেষবারের মত দেখবেন মা।
সাও পাওলোর যে ক্লাবের হয়ে ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠা, যে ক্লাবের মাঠে অসংখ্য স্মৃতি সেই ক্লাব সান্তোসের মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে পেলের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান।
সান্তোসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেলেকে ভক্তদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামকে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেটা আবার সান্তোসের হোম ভেন্যু।
বিবৃতিতে ক্লাবটি আরও জানায়, পেলের কফিন সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে নিয়ে সোমবার সকালে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে রাখা হবে। ঐদিন সকাল ১০টা থেকে ভক্তরা শেষবারের মত পেলেকে দেখতে পাবেন এবং ৩ জানুয়ারি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে।
পেলের জন্য থেমেছিল নাইজেরিয়ায় ‘গৃহযুদ্ধ’।।
ষাটের দশকে বিশ্বের জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর একটি ছিল ব্রাজিলের সান্তোস এফসি ফুটবল ক্লাব। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ক্লাবটি প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করতো। এই খ্যাতির কারণে তারা বাড়তি কিছু সুবিধাও পেয়েছিল।
নাইজেরিয়ায় এরকম একটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে যায় সান্তোস। ক্লাবটির হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন পেলে। তাতেই ঘটে যায় অভূতপূর্ব এক ঘটনা।
নাইজেরিয়াতে তখন রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ চলছিল। দেশ থেকে বায়াফ্রা রাজ্যটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। সান্তোস এফসির ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন এমন একজন গবেষক গুইলহের্ম গুয়াশের মতে, এরকম একটি পরিস্থিতিতে নাইজেরিয়াতে খেলোয়াড়দের পাঠানোর ব্যাপারে ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক দুশ্চিন্তা ছিল।
তবে শুধুমাত্র পেলেকে দেখার জন্য বিবদমান পক্ষগুলো তখন যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়। ১৯৬৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বেনিন সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে সান্তোস ২-১ গোলে স্থানীয় একাদশকে পরাজিত করে।
১৯৭৭ সালে পেলের যে আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় সেখানে এই ঘটনার কোন উল্লেখ ছিল না। তবে পেলের আরেকটি আত্মজীবনী, যা প্রথমটির ৩০ বছর পর প্রকাশিত হয়, সেখানে কিন্তু তিনি ওই যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘এই প্রদর্শনী ম্যাচের জন্য গৃহযুদ্ধ থামানো হবে বলে” খেলোয়াড়দেরকে জানানো হয়েছিল।’
‘আমি জানি না এই ঘটনা পুরোপুরি সত্য কি না। তবে নাইজেরিয়ানরা আমাদের নিশ্চিতভাবে জানিয়েছিলেন, যে আমরা যখন ওখানে খেলতে যাবো তখন বায়াফ্রানরা সেখানে আক্রমণ করবে না।’
গোলরক্ষক হিসেবেও সফল ছিলেন পেলে।।
ফুটবল খেলায় পেলে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন, সেটা মানুষের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খেলাধুলার বাইরের জগতেও তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল।
ক্যারিয়ারে তার অর্জন, গোলসংখ্যা নিয়ে অনেকে জানলেও মাঠে তার ভিন্ন এক ভূমিকা অনেকেরই রয়েছে অজানা। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, বাস্তব জীবনে পেলে ছিলেন ক্লাব ও দেশের বিকল্প গোলরক্ষক।
পুরো ক্যারিয়ারে কিংবদন্তি এই ফুটবলার সান্তোস এফসি ক্লাবের হয়ে চারবার গোলরক্ষকের গ্লাভস পরেছিলেন। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলিয়ান কাপের সেমিফাইনালেও তাকে গোলপোস্টের সামনে অতন্ত্র প্রহরী হতে হয়েছিল।
গোলরক্ষক হিসেবে পেলেকে একশো নম্বরের মধ্যে একশোই দেয়া যেতে পারে। কারণ তার দল সবকটি খেলায় জিতেছিল এবং তিনি একটি গোলও হজম করেননি।