
চৌহালী ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে একটি প্রভাবশালী চক্র ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসত-বাড়ি, মসজিদ, কবরস্থান ও ফসলি জমি। আজ ১৬/০৫/২০২২ ইং জনতা স্কুলের নদীর ঘাট থেকে নদীর পারের জনসাধারণ তিনটি বডি একটি ড্রেজার ও একটি কাটার আটক করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানায়। প্রায় দুমাস ধরে উপজেলা সদরের উত্তরে মিয়া পাড়া নদীর ঘাট, জোতপাড়া নদীর ঘাট দক্ষিণ অঞ্চলের বাঘুটিয়া ইউনিয়নে চরবিনানুই বাজার, তার দক্ষিণে চরসলিমবাদ, ভুতের মোড় ও বিনানুই মরা নদী এলাকা থেকে এ বালু উত্তোলন চলছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ আফসানা ইয়াসমিন বলেন ,তিনি এ ব্যাপারে অবগত নয়। তবে তিনি বলেছেন,এ বালু ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি ।
এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, যমুনা নদীর ভাঙ্গণে বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার অবশিষ্ট অংশকে রাক্ষুসী যমুনার করালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বাঁধের উত্তরে খাষকাউলিয়া, ঘোরজান এবং দক্ষিনে খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া এলাকয় যমুনা নদীর পাড়ের পাশে নদীর তলদেশ থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী বালুদস্যু চক্র অবৈধ ভাবে এই বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব শুরু করেছে। আরো জানা যায়, চৌহালী উপজেলার কোথায়ও সরকার অনুমোদিত কোন বালুমহল নেই। এ নদী থেকে বালু উত্তোলনে নেই প্রশাসনের অনুমতিও। তারপরও কিছু প্রভাবশালীরা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে একটি মহল দীর্ঘ দিন ধরে যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ড্রেজারসহ বিভিন্ন দেশীয় পদ্ধতিতে বালু তুলে গড়েছে বালুর স্তুপ। সেখান থেকে কিনে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে নির্মাণ কাজ ও খাল ভরাটের কাজ চলছে। বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধ ভাবে বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। তবে বালু দস্যুদের নিকট থেকে প্রশাসনের কতিপয় কর্তা ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসি। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চৌহালিবাসি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছরই সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। আর এ ভয়াবহ নদী ভাঙনের কারণে মানচিত্র থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে চৌহালী উপজেলা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগমী বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। হুমকির মুখে পরবে এ উপজেলার নদী তীরবর্তী শত শত ঘরবাড়ি ও শত শত হেক্টর আবাদি জমি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । ফলে এ সবের মালিকরা এখনই শংকা গ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তারা প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিককে পাওয়া যায়নি। তবে ড্রেজার শ্রমিক রতন জানান, মোটামুটি দুই মাস ধরে সরকারি মাটি সহ এলাকার মানুষের ভিটাবাড়ি ও খাল ভরাটের জন্য যমুনা নদীর ফাঁরির উত্তর ও দক্ষিণ সাইড থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে এলাকার সবাই অবগত আছে। যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মালিক ভাল বলতে পারবে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান চৌহালী উপজেলা কে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য আমরা যে আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্ত কতিপয় প্রশাসনের ব্যক্তিরা অবৈধ বালু ব্যাবসায়িদের সাথে যোগ সাজসে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাসের পর মাস তারা যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে যার ফলে নদীতে সব সময় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে চৌহালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হারুন আর রশিদ বলেন এ বিষয়টা আমাদের নয়। চৌহালী থানা নৌ পুলিশ ফাঁরির ইনজার্য মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে নির্দেশনা দিবে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিবো।উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি মিটিংয়ে আছি পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ আফসানা ইয়াসমিন আরও জানান, চৌহালী উপজেলায় কোন ইজারাকৃত বালু মহল নেই। চৌহালীতে বালু উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।