
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ চনপাড়া বস্তি এখন অপরাধের আতুরঘর। অপরাধ জগতের কি নেই এখানে, সব ধরনের নেশা জাতীয় মাদক, দেহ ব্যবসা,ভাড়ায় মানুষ খুন,জোর করে বসত ভিটা দখল। শুধু টাকা দিলেই মিলে এসব অপরাধীদের। আর এসব অপরাধের কলকাঠি নাড়ে কিছু রাজনীতির নামধারী প্রভাবশালীরা। যারা সারা জীবন ঘাপটি মেরে থাকে আইনের বাহিরে। তাদের লেজ এত বড় যে আইন তাদের পর্যন্ত পৌছাতে পারে না। দিনে দিনে এসব অপরাধীরা এত শক্তিশালী হয়ে উঠে পড়েছে যে তাদের হামলা থেকে রেয়াই পায় না খোদ আইন শৃংখলা বাহিনী। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে র্যাব চনপাড়া বস্তিতে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়। এই হামলার ঘটনায় র্যাব-১-এর নায়েক সুবেদার তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানসহ ৩১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। গত ১১ নভেম্বর রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী সিটি শাহিন বন্ধুযুদ্ধে নিহত হয়। তার নামে হত্যা, মাদকসহ ২৩ টি মামলা ছিল।
চনপাড়ার সবশেষ অপরাধ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশকে (২৩) নির্যাতন করে হত্যা।
এই হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীদের ধরতে প্রশাসনের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। ফারদিন হত্যার ৮ দিন হয়ে গেলেও খুনিদের এখনও গ্রেফতার করতে পারিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ফারদিনের খুনিদের ধরতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
চনপাড়া কীভাবে গেলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, চনপাড়া বস্তি থেকে ফারদিনের বাসা তিন কিলোমিটার দূরে। ধারনা করছি ফারদিনকে পূর্ব পরিকল্পনা
মতে মেইন রোড থেকেই চনপাড়া বস্তির ভিতরে নেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে পিটিয়ে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। লাশ গুম করতে একটি প্রাইভেট কারে ফারদিনের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি শনাক্ত হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, চনপাড়া বস্তি পুরোটাই মাদক বিক্রির এলাকা হিসেবে পরিচিত। সন্ধ্যা হলেই অপরাধীদের বিচরন শুরু হয়। চনপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যে জায়গায় ফারদিনের মোবাইল লোকেশন পাওয়া গেছে তার ঠিক বিপরীত পাশেই পূর্ব দিকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে মাদক কারবারী চালান প্রভাবশালী এক নারী।
সাবেক একজন ইউপি মেম্বার বলেন, চনপাড়া বস্তির পুরোটাই মাদকের সাম্রাজ্য। এখানে ৬৪টি মাদকের স্পট রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান, রায়হান, শাওন, নূর জামাল, মাল্টা রনি, মুজাহিদ মনু,শমসের,শফিকুল,শাহ আলম ও সাহাবুদ্দিনসহ আরো অনেকে। এলাকাবাসী জানান, চনপাড়া বস্তির শেষ মাথায় আইউব আলী ফকিরের দরবার শরীফ নামে একটি মাজার রয়েছে। এই মাজার হচ্ছে অপরাধীদের অভয় স্থল। এই মাজার রোড দিয়ে নদীর পাড়ে সব ধরনের অপরাধের কন্টাক্ট নেয় সন্ত্রাসীরা। সেই সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে তারা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়। এলাকার মানুষের কাছে চনপাড়া এক আতঙ্কিত নাম। রূপগঞ্জবাসী এক সময় যাদের বাচার জন্য আশ্রয় দিয়েছিল তারাই এখন রূপগঞ্জের আতংক।