
মো.ইমরান হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার।।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার টালাবহ ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানিয়াচালা এলাকার সংযোগ আঞ্চলিক কাঁচা রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবত অবহেলিত। দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।
দুই জেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত দুই গ্রামের সাধারণ মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। মাত্র দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতে কাদা -পানিতে অটোরিকশা চলাতো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব এলাকার কর্মজীবী মানুষ,ব্যবসায়ী,শিক্ষার্থী ও জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁদাযুক্ত রাস্তার কারণে বাধ্য হয়ে এখানকার মানুষদের দেড় কিলোমিটার রাস্তার পরিবর্তে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুত্রাপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড টালাবহ বাজার থেকে পশ্চিমে হামিদ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত এবং মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড বানিয়াচালা – রাজাবাড়ি বাঁধ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো পথের ব্যবস্থা না থাকায় কাঁদা মাড়িয়েই চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, বৃদ্ধসহ অন্যান্য সবার। সারা বছরের বর্ষা মৌসুমের ৩/৪ মাস ভোগান্তির শিকার হতে হয় গ্রামবাসীদের।
একদিকে কালিয়াকৈর উপজেলার টালাবহ এলাকায় বাজার, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মডেল হাইস্কুল রয়েছে। অপরদিকে মির্জাপুর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, কেজিস্কুল,হাইস্কুল, বাজার ও উপজেলার শ্রেষ্ঠ ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয় সীমান্তবর্তী দুই গ্রামের বাসিন্দাদের । বৃষ্টি হলেই পানি ও মাটি মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায় পুরো রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েন ওই এলাকার পাঁচ থেকে দশ হাজারের অধিক মানুষ। এই এলাকার মানুষের আতঙ্ক ও ভয়ের আরেক নাম বৃষ্টি। কাঁদার জন্য গ্রামের এ রাস্তায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভ্যান-রিকশা ঢোকে না। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে তো দূরে থাক, খালি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দায়। বৃষ্টির দিনে গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সও এখানে ঢুকতে পারে না। অনেক সময় কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঁধে করে কর্দমাক্ত রাস্তা পার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা , আতোয়ার রহমান , খোরশেদ আলম, ইউসুফ আলী বলেন আমাদের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষিপণ্য সময় মতো বিক্রি করতে পারি না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যায়। বিশেষ করে বৃষ্টি-কাঁদার দিনে জুতা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে দেড় কিলোমিটার কাঁদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। আর কত কাল এ কষ্ট করতে হবে কে জানে।
রাজাবাড়ি কলেজ শিক্ষার্থী সুমন মিয়া ও তানিয়া আক্তার বলেন, আমাদের কলেজের ডেস সাদা, রাস্তায় কাঁদা ও পিচ্ছিল, হাটা যায়না। প্রায়ই সময় কাঁদায় কলেজ -ড্রেস নোংরা হওয়ায় বাড়িতে ফিরে যেতে হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে রাস্তার উন্নয়ন হচ্ছে না।
টালাবহ গ্রামের মো. মোতালেব হোসেন , মো. বাবুল হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল হয়নি সবশেষ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে কাঁদা অংশগুলোতে কয়েকগাড়ি রাবিশ ইট চেয়োও পাইনি। তাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ আমাদের এই রাস্তার দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য। এদিকে সূত্রাপুর ইউনিয়নের টালাবহ ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মো.ছানোয়ার হোসেন বলেন , টালাবহ বাজার থেকে রাজাবাড়ি পর্যন্ত এল,জি.ই.ডি রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টালাবহ বাজার হতে সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত রাস্তা পাঁকা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কাজ শুরু করা হয়নি।
অপরদিকে গোড়াই ইউনিয়নের বানিয়াচালা ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো.আবুল কাসেম বলেন, জন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি জরুরী ভিত্তিতে পাঁকা করা প্রয়োজন। সামন্য বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্কুল -কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে রাস্তায় খোয়া বিছানোর কাজ শুরু হলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কাজ শুরু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করে সাধারন মানুষের চলাচলের উপযোগি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।