Dhaka , Monday, 30 June 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ঝড় ও বজ্রাপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।। মানুষকে ভালোবাসেন বলেই তাদের টানে আমেরিকা ছেড়ে দেশের এসে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন- দেলোয়ার মোমেন।। শরীয়তপুরে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা কালে জনতার হাতে যুবক আটক।। রামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আরাফাতের  নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তা সংস্কার।। রূপগঞ্জে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ।। তিতাসের জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেনের শিক্ষকতার দুই যুগপূর্তি।। কোম্পানীগঞ্জে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার- স্বামী পলাতক।। নরসিংদী বৃষ্টির কারনে পশুর হাটে বেচা কেনা কম।। মায়ের সামনে পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু।। ঈদুল আযহা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে টানা ৮ দিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ।। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিংয়ে সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে রাজাপুরের মশিউর রহমান তামিম।। সুন্দরগঞ্জের দহবন্দ ইউনিয়নে ভিজিএফ চাল বিতরণ।। কুমিল্লা পিটিআই কর্তৃক সততা নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন- তানজুরুন নাহার।। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদরপুরে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর শুভ সূচনা।। সড়কতো নয় যেন ধান শুকানোর চাতাল।। তিতাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণ অনুষ্ঠিত।। ঈদ উপলক্ষে হিলিতে বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে চাল বিতারণ।।  পাবনায় হত্যায় মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।। আই-ইইই ইবি স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চের সভাপতি পিয়াস সম্পাদক ইকবাল।। পাবনা জেলা স্কুল জাতীয় পর্যায়ে কুইজ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়।। সিলেটে বৃস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত-ফের জলাবদ্ধতার শঙ্কা।। জনপ্রিয়তা ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রফিক আমার নামে মিথ্যাচার চালাচ্ছে- আবুল বাশার  বাদশা।। নিখোঁজের দুদিন পর মাদরাসা ছাত্রের মরদেহ মিলল ঘাটলার নিচে।। ঝালকাঠিতে হত্যা মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন।। সুন্দরগঞ্জে পশুর হাট নিয়ে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ৩ রাউন্ড গুলি বিনিময়- পুলিশসহ আহত ১০।। নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু।। পাবনায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নছিমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২ জন নিহত আহত -৭ জন।। রূপগঞ্জ কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রফিক সমর্থকদের উপর হামলা।। ৩৬ দিন পর যুবকের লাশ উত্তোলন- ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের।। শিবচরে আগুনে ১৩ গরু মারা গেছে।।

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:48:59 pm, Wednesday, 22 September 2021
  • 180 বার পড়া হয়েছে

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

 

রবিউল হোসাইন সবুজ।।

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের মহিয়সী নারী দেশের গৌরব কুমিল্লার ১৪ পরগনার জমিদার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীকে এখন আর কেউ স্মরন করে না। দীর্ঘ ১৮৭ বছর পার হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনো মিলেনি তার ভাগ্যে। তার রেখে যাওয়া বহু স্থাপনা ও বহুস্মৃতি বিলীন হওয়ার পথে এবং বহু সম্পদ জবর দখল হয়ে গেছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী ‘কত লাকসাম কত বাতি’ খ্যাত এ অঞ্চল কুমিল্লা জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মোঘল ঐহিহাসিক যুগের গৌরবের কথা জানান দেয়, তেমনি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের এই মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামের ঐতিহ্যের কথা কয় নিজস্ব স্বকীয়তায়।.

এখন আর তার জন্ম-মৃত্যু দিবসটিও পালন করা হয় না। দেরীতে হলেও সরকারীভাবে এ দিনে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় এবং পারিবারিক পর্যায়ে ঐ মহিয়সী নারীর মৃত্যু দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। ঠিক তেমনি চলমান বছর আজ ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারী-বেসরকারী সামাজিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। .

জানা যায়, ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার তৎকালীন হোমনাবাদ পরগনা লাকসামের এককালের রাক্ষুসী খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষে পশ্চিমগাঁও গ্রামে নবাব ফয়জুন্নেছা জন্ম গ্রহণ করেন। তার উত্তরসরীদের মধ্যে অবস্থানকারী মোতাহের খানের পুত্র সুলতান খাঁন ওরফে গোরাগাজি চৌধুরীর পুত্র হোসেন আলী চৌধুরী গাজী শাহেদার অন্যতম বংশধর মুজাফফর গাজির কন্যা মায়মুনা বিবি ওরফে ময়না বিবিকে বিবাহের পর তাদের দুই পুত্র আশ্রাফ আলী চৌধুরী ও আহম্মদ আলী চৌধুরী আর দুই কন্যা আফিয়া চৌধুরানী ও আমেনা চৌধুরানী, আহম্মদ আলী চৌধুরী হলেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পিতা। তার মাতৃকুল নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ভুলুয়ার অন্তর্গত ধলীয়া গ্রামে মিনা মাহতাব নামে এক সভ্রান্ত বংশীয় জনদরদি জমিদারের পুত্র ফজিল আহম্মদ চৌধুরীর শেষ বংশধর বেজু মিয়া চৌধুরী। এরই ভগ্নিপতি জমিদার আমজাদ চৌধুরী ওরফে ডেঙ্গুমিয়া চৌধুরীর পুত্র আসাদ চৌধুরীর প্রথমা কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী। তৎকালীন হোমনাবাদের জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও ভুলুয়ার জমিদার আসাদ চৌধুরী কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা হলেন এ মহিয়সী নারী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। নবাব ফয়জুন্নেছার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সৈয়দা বদরুন্নেছা চৌধুরানীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে এবং অপর মেয়ে সৈয়দা আসাদুন্নেছা চৌরানীকে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জমিদার বাড়ীতে বিয়ে দেয়। বাল্য কালে ফয়জুন্নেছার ওস্তাদ তাকে শুধূ আরবী-উর্দু ও ফারসিই পড়াননি একই সাথে বাংলা ও সংস্কৃত চর্চাও শিখিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও এলাকার লোকজন তাঁকে ফয়জুন বেগম বলে ডাকতেন। .

স্থানীয় সূত্র জানায়, মোঘল সম্রাট শাহআলমের শাসনকালে শাহজাদা জাহান্দর খানের পুত্র হুমায়ন খাঁ হোমনাবাদ পরগনার জমিদারি লাভ করার পর ৬ষ্ঠ বংশধর আহম্মদ আলী চৌধুরীর পিতা জমিদার নন্দিনী আরফান্নেছা মাতার তৃতীয় সন্তান এ ফয়জুন্নেছা। বড় দুই ভাই ইয়াকুব আলী চৌধুরী ও ইউছুফ আলী চৌধুরী এবং ছোট বোন লতিফান্নেছা চৌধুরী রানী। ফয়জুন্নেছার মাতা ও জমিদার নন্দিনী এবং জমিদার পত্নী ছিলেন বলে ফয়জুন্নেছা সকলের আদুরে কন্যা হলে যা হয় তার ব্যাতিক্রম ছিলেন না। প্রাচুর্যেই জন্মে ছিলেন জমিদার তনয়া ফয়জুন্নেছা। বাল্যকালেই ১৮৪৪ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে অকালেই তিনি পিতৃহারা হলেন। তখন তিনি ১০ বছরের বালিকা মাত্র। ইয়েমেনের অধিবাসী বিখ্যাত ব্যক্তি হোমনাবাদ পরগনার আদী মুসলমান জমিদার সাধুবর গাজী শাহেদা।.

বংশধরদের মধ্যে এক বংশের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী অপর বংশধর বরুড়া উপজেলার বাউকসারের জমিদার মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী। কিশোরী ফয়জুন্নেছার বিয়ের প্রস্তাব আসে দুঃসর্ম্পকীয় আত্মীয় ওই জমিদার গাজী চৌধুরীর সাথে। ১৮৪৯ সালের শেষ দিকে অনেক নাটকীয় ও কৌশলী শর্তের বেড়াজালে অবশেষে ফয়জুন্নেছার বিয়ে সম্পন্ন হলো দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে তরুন প্রেমিক জমিদার গাজী চৌধুরীর সাথে। চলে গেলেন স্বামীর বাড়ি বরুড়া উপজেলার বাউকশার গ্রামে। শর্তানুযায়ী গাজী চৌধূরী ও ফয়জুন্নেছার জীবন সুখে চলছিল। এরমধ্যে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নিল আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শর্ত ভঙ্গ শুরু হলে বড় মেয়ে আরশাদুন্নেছাকে ওই বাড়ীতে রেখে ছোট মেয়ে বদরুন্নেছাকে সঙ্গে নিয়ে লাকসামের পশ্চিমগাঁও চলে আসে মায়ের কাছে।.

১৮৮৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর ফয়জুন্নেছা জমিদারীর দায়িত্ব তুলে নিয়ে কর্মতৎপরতার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলেন একজন সুদক্ষ, প্রজাহিতৈষী, শিক্ষানুরাগী, তেজস্বী ও বিচক্ষণ শাসক হিসাবে। তিনি পিতা-মাতার শোককে হাতিয়ার করেই দীর্ঘ ২১ বছর জমিদারী শাসনে হয়ে উঠেন জীব সংগ্রামের এক অনন্যা মহিয়সী নারী। হঠাৎ করে ১৮৮৯ সালে ফয়জুন্নেছার স্বামী দারুন ব্যাথা- যন্ত্রনা নিয়ে কুমিল্লা শহরের মীর বাড়ীতে মৃত্যু বরন করেন। .

সূত্র আরো জানায়, জমিদার ফয়জুন্নেছার সমগ্রজীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে। জমিদারী পরিচালনা ছাড়াও তাঁর দুটি প্রধান সাধনা ছিল আল্লাহর ইবাদত এবং সাহিত্য সাধনা। নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জমিদারীর ১৪টি মৌজা ছাড়াও দেশে-বিদেশে ১৪টি প্রাথমিক মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বীনিয়াত শিক্ষা, হাইস্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয়, হাসপাতাল, দিঘী-পুকুর, মসজিদ, মুসাফিরখানা, পুল-ব্রিজ, পত্র-পত্রিকায় পৃষ্ঠপোষকতা, কবি সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগ, ফয়জুন পাঠাগার, রূপজালাল গ্রন্থ রচনাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করে গেছেন তিনি। এছাড়া ১৮৯৪-৯৫ সালে মক্কাশরিফে হজ্বব্রত পালন করতে গিয়ে ওই দেশের বাদশা আব্বাসিয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী নামে যোবায়দা নহর পুনঃখনন এবং একটি মুসাফিরখানা রোবাত স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালের ১৮ জুন তার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি জনকল্যানে ওয়াকফ করে দেন। তিনি তাঁর ১৪ পরগনায় প্রায় সময়ই পালকীতে চড়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড তদারকিতে যেতেন। .

তৎকালীন ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ ডগলাস জনকল্যানমুখি কাজে অর্থ যোগানের জন্য দেশের সকল জমিদারদের কাছে চিঠি পাঠান। এ সময় ২৪ পরগনার ব্রিটিশ গভর্নর ছিলেন লর্ড কার্জন। বিশাল পরিমান অর্থ যোগানের কথা ভেবে ওই জনকল্যানমুখী কাজে দেশের অন্যান্য জমিদাররা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শেষ মূহর্তে হোমনাবাদ ১৪ পরগনার জমিদার ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী নিজেই ঋণ হিসাবে নয় জনকল্যানে সম্পূর্ন টাকা তিনি দান করেন। টাকার পরিমান ১ লক্ষ টাকা হলেও বর্তমান যার পরিমান ৭০ কোটি টাকা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন ভিক্টোরিয়া মহারানী বিশ্বের একজন মুসলিম নারী জমিদারের মহানুভবতা ও দানশীলতায় মুদ্ধ হয়ে রানী ফয়জুন্নেছাকে বেগম উপাধিতে ভূষিত করলে তিনি সম্মানের সাথে তা প্রত্যাখান করেন।.

মহিলা জমিদার হিসাবে এমনিতেই তিনি বেগম বলে পরিচিত। রানী ভিক্টোরিয়ার রাজ দরবারে পুনরায় পরামর্শ করে ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীকে নবাব উপাধিকে ভুষিত করার সিদ্ধান্ত নেন যা ১৮৮৯ খ্রিঃ সেই খেতাব প্রদান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বর্তমান কুমিল­ার চর্থাস্থ সৈয়দ বাড়ীর মাঠে। ১৯৯৬ সালে একুশে পদক ছাড়াও মিলেছে তার ভাগ্যে বিভিন্ন নারী বিষয়ক খেতাব। অথচ বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর পূর্ব থেকেই এ নারী জমিদার ফয়জুন্নেছা দেশে-বিদেশে বহু জনকল্যান মূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। .

তার জমিদারীর শাসনামলে হাসি কান্না দুঃখ বেদনায় ভরপুর তার সার্বিক জীবনে কাহিনী নিয়ে রূপক কাব্যগ্রন্থ রূপজালাল বইটি ১৮৭৬ খ্রিঃ প্রকাশ করা ছাড়াও তার কর্মজীবনের উপর বিভিন্ন লেখক ও গবেষক প্রায় ২০টির মত বই রচনা করেছেন। অবশেষে ১৯০৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহিয়সী প্রথম রানী নবাব ফয়জুন্নেছা চির নিদ্রায় শায়িত হন তারই নির্মিত নবাব বাড়ি জামে মসজিদের পাশে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ঝড় ও বজ্রাপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।।

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

আপডেট সময় : 07:48:59 pm, Wednesday, 22 September 2021

 

রবিউল হোসাইন সবুজ।।

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের মহিয়সী নারী দেশের গৌরব কুমিল্লার ১৪ পরগনার জমিদার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীকে এখন আর কেউ স্মরন করে না। দীর্ঘ ১৮৭ বছর পার হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এখনো মিলেনি তার ভাগ্যে। তার রেখে যাওয়া বহু স্থাপনা ও বহুস্মৃতি বিলীন হওয়ার পথে এবং বহু সম্পদ জবর দখল হয়ে গেছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী ‘কত লাকসাম কত বাতি’ খ্যাত এ অঞ্চল কুমিল্লা জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন মোঘল ঐহিহাসিক যুগের গৌরবের কথা জানান দেয়, তেমনি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের এই মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামের ঐতিহ্যের কথা কয় নিজস্ব স্বকীয়তায়।.

এখন আর তার জন্ম-মৃত্যু দিবসটিও পালন করা হয় না। দেরীতে হলেও সরকারীভাবে এ দিনে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় এবং পারিবারিক পর্যায়ে ঐ মহিয়সী নারীর মৃত্যু দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। ঠিক তেমনি চলমান বছর আজ ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার ১১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারী-বেসরকারী সামাজিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। .

জানা যায়, ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার তৎকালীন হোমনাবাদ পরগনা লাকসামের এককালের রাক্ষুসী খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষে পশ্চিমগাঁও গ্রামে নবাব ফয়জুন্নেছা জন্ম গ্রহণ করেন। তার উত্তরসরীদের মধ্যে অবস্থানকারী মোতাহের খানের পুত্র সুলতান খাঁন ওরফে গোরাগাজি চৌধুরীর পুত্র হোসেন আলী চৌধুরী গাজী শাহেদার অন্যতম বংশধর মুজাফফর গাজির কন্যা মায়মুনা বিবি ওরফে ময়না বিবিকে বিবাহের পর তাদের দুই পুত্র আশ্রাফ আলী চৌধুরী ও আহম্মদ আলী চৌধুরী আর দুই কন্যা আফিয়া চৌধুরানী ও আমেনা চৌধুরানী, আহম্মদ আলী চৌধুরী হলেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর পিতা। তার মাতৃকুল নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ভুলুয়ার অন্তর্গত ধলীয়া গ্রামে মিনা মাহতাব নামে এক সভ্রান্ত বংশীয় জনদরদি জমিদারের পুত্র ফজিল আহম্মদ চৌধুরীর শেষ বংশধর বেজু মিয়া চৌধুরী। এরই ভগ্নিপতি জমিদার আমজাদ চৌধুরী ওরফে ডেঙ্গুমিয়া চৌধুরীর পুত্র আসাদ চৌধুরীর প্রথমা কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরী। তৎকালীন হোমনাবাদের জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও ভুলুয়ার জমিদার আসাদ চৌধুরী কন্যা আরফান্নেছা চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ কন্যা হলেন এ মহিয়সী নারী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। নবাব ফয়জুন্নেছার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সৈয়দা বদরুন্নেছা চৌধুরানীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে এবং অপর মেয়ে সৈয়দা আসাদুন্নেছা চৌরানীকে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জমিদার বাড়ীতে বিয়ে দেয়। বাল্য কালে ফয়জুন্নেছার ওস্তাদ তাকে শুধূ আরবী-উর্দু ও ফারসিই পড়াননি একই সাথে বাংলা ও সংস্কৃত চর্চাও শিখিয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও এলাকার লোকজন তাঁকে ফয়জুন বেগম বলে ডাকতেন। .

স্থানীয় সূত্র জানায়, মোঘল সম্রাট শাহআলমের শাসনকালে শাহজাদা জাহান্দর খানের পুত্র হুমায়ন খাঁ হোমনাবাদ পরগনার জমিদারি লাভ করার পর ৬ষ্ঠ বংশধর আহম্মদ আলী চৌধুরীর পিতা জমিদার নন্দিনী আরফান্নেছা মাতার তৃতীয় সন্তান এ ফয়জুন্নেছা। বড় দুই ভাই ইয়াকুব আলী চৌধুরী ও ইউছুফ আলী চৌধুরী এবং ছোট বোন লতিফান্নেছা চৌধুরী রানী। ফয়জুন্নেছার মাতা ও জমিদার নন্দিনী এবং জমিদার পত্নী ছিলেন বলে ফয়জুন্নেছা সকলের আদুরে কন্যা হলে যা হয় তার ব্যাতিক্রম ছিলেন না। প্রাচুর্যেই জন্মে ছিলেন জমিদার তনয়া ফয়জুন্নেছা। বাল্যকালেই ১৮৪৪ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে অকালেই তিনি পিতৃহারা হলেন। তখন তিনি ১০ বছরের বালিকা মাত্র। ইয়েমেনের অধিবাসী বিখ্যাত ব্যক্তি হোমনাবাদ পরগনার আদী মুসলমান জমিদার সাধুবর গাজী শাহেদা।.

বংশধরদের মধ্যে এক বংশের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী অপর বংশধর বরুড়া উপজেলার বাউকসারের জমিদার মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী। কিশোরী ফয়জুন্নেছার বিয়ের প্রস্তাব আসে দুঃসর্ম্পকীয় আত্মীয় ওই জমিদার গাজী চৌধুরীর সাথে। ১৮৪৯ সালের শেষ দিকে অনেক নাটকীয় ও কৌশলী শর্তের বেড়াজালে অবশেষে ফয়জুন্নেছার বিয়ে সম্পন্ন হলো দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে তরুন প্রেমিক জমিদার গাজী চৌধুরীর সাথে। চলে গেলেন স্বামীর বাড়ি বরুড়া উপজেলার বাউকশার গ্রামে। শর্তানুযায়ী গাজী চৌধূরী ও ফয়জুন্নেছার জীবন সুখে চলছিল। এরমধ্যে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নিল আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শর্ত ভঙ্গ শুরু হলে বড় মেয়ে আরশাদুন্নেছাকে ওই বাড়ীতে রেখে ছোট মেয়ে বদরুন্নেছাকে সঙ্গে নিয়ে লাকসামের পশ্চিমগাঁও চলে আসে মায়ের কাছে।.

১৮৮৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর ফয়জুন্নেছা জমিদারীর দায়িত্ব তুলে নিয়ে কর্মতৎপরতার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলেন একজন সুদক্ষ, প্রজাহিতৈষী, শিক্ষানুরাগী, তেজস্বী ও বিচক্ষণ শাসক হিসাবে। তিনি পিতা-মাতার শোককে হাতিয়ার করেই দীর্ঘ ২১ বছর জমিদারী শাসনে হয়ে উঠেন জীব সংগ্রামের এক অনন্যা মহিয়সী নারী। হঠাৎ করে ১৮৮৯ সালে ফয়জুন্নেছার স্বামী দারুন ব্যাথা- যন্ত্রনা নিয়ে কুমিল্লা শহরের মীর বাড়ীতে মৃত্যু বরন করেন। .

সূত্র আরো জানায়, জমিদার ফয়জুন্নেছার সমগ্রজীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার মধ্যে। জমিদারী পরিচালনা ছাড়াও তাঁর দুটি প্রধান সাধনা ছিল আল্লাহর ইবাদত এবং সাহিত্য সাধনা। নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জমিদারীর ১৪টি মৌজা ছাড়াও দেশে-বিদেশে ১৪টি প্রাথমিক মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বীনিয়াত শিক্ষা, হাইস্কুল, বালিকা বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয়, হাসপাতাল, দিঘী-পুকুর, মসজিদ, মুসাফিরখানা, পুল-ব্রিজ, পত্র-পত্রিকায় পৃষ্ঠপোষকতা, কবি সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগ, ফয়জুন পাঠাগার, রূপজালাল গ্রন্থ রচনাসহ বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করে গেছেন তিনি। এছাড়া ১৮৯৪-৯৫ সালে মক্কাশরিফে হজ্বব্রত পালন করতে গিয়ে ওই দেশের বাদশা আব্বাসিয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী নামে যোবায়দা নহর পুনঃখনন এবং একটি মুসাফিরখানা রোবাত স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালের ১৮ জুন তার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি জনকল্যানে ওয়াকফ করে দেন। তিনি তাঁর ১৪ পরগনায় প্রায় সময়ই পালকীতে চড়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড তদারকিতে যেতেন। .

তৎকালীন ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ ডগলাস জনকল্যানমুখি কাজে অর্থ যোগানের জন্য দেশের সকল জমিদারদের কাছে চিঠি পাঠান। এ সময় ২৪ পরগনার ব্রিটিশ গভর্নর ছিলেন লর্ড কার্জন। বিশাল পরিমান অর্থ যোগানের কথা ভেবে ওই জনকল্যানমুখী কাজে দেশের অন্যান্য জমিদাররা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শেষ মূহর্তে হোমনাবাদ ১৪ পরগনার জমিদার ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী নিজেই ঋণ হিসাবে নয় জনকল্যানে সম্পূর্ন টাকা তিনি দান করেন। টাকার পরিমান ১ লক্ষ টাকা হলেও বর্তমান যার পরিমান ৭০ কোটি টাকা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন ভিক্টোরিয়া মহারানী বিশ্বের একজন মুসলিম নারী জমিদারের মহানুভবতা ও দানশীলতায় মুদ্ধ হয়ে রানী ফয়জুন্নেছাকে বেগম উপাধিতে ভূষিত করলে তিনি সম্মানের সাথে তা প্রত্যাখান করেন।.

মহিলা জমিদার হিসাবে এমনিতেই তিনি বেগম বলে পরিচিত। রানী ভিক্টোরিয়ার রাজ দরবারে পুনরায় পরামর্শ করে ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীকে নবাব উপাধিকে ভুষিত করার সিদ্ধান্ত নেন যা ১৮৮৯ খ্রিঃ সেই খেতাব প্রদান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বর্তমান কুমিল­ার চর্থাস্থ সৈয়দ বাড়ীর মাঠে। ১৯৯৬ সালে একুশে পদক ছাড়াও মিলেছে তার ভাগ্যে বিভিন্ন নারী বিষয়ক খেতাব। অথচ বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর পূর্ব থেকেই এ নারী জমিদার ফয়জুন্নেছা দেশে-বিদেশে বহু জনকল্যান মূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। .

তার জমিদারীর শাসনামলে হাসি কান্না দুঃখ বেদনায় ভরপুর তার সার্বিক জীবনে কাহিনী নিয়ে রূপক কাব্যগ্রন্থ রূপজালাল বইটি ১৮৭৬ খ্রিঃ প্রকাশ করা ছাড়াও তার কর্মজীবনের উপর বিভিন্ন লেখক ও গবেষক প্রায় ২০টির মত বই রচনা করেছেন। অবশেষে ১৯০৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহিয়সী প্রথম রানী নবাব ফয়জুন্নেছা চির নিদ্রায় শায়িত হন তারই নির্মিত নবাব বাড়ি জামে মসজিদের পাশে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে।